মানসিক চাপের বিবিধ কারণসমূহ
কুখাদ্য-কফি, চা, নেশাদ্রব্য, মদ, কোমল পানীয়, মিষ্টি, মরিচ, মশলা, মাংস, ভিনেগার বা লবনাক্ত জল, সিগারেট, তামাক, মানসিক চাপকে সক্রিয় করে তোলে। এই সমস্ত খাবারগুলো জিহ্বায় সুড়সুড়ি এবং কৃত্রিম প্রশান্তির অনুভব প্রদান করলেও তা মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে। শাকসবজি, ফল, দুধ, মূল, শস্য প্রভৃতি খাদ্য প্রাকৃতিক এবং পুষ্টিকর।
শ্বাস- মন যখন চাপে থাকে আমরা বুক থেকে অগভীরভাবে
শ্বাস গ্রহণ করি যা সেই চাপকে আরো বর্ধিত করে। উদর
থেকে গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করলে তা বিশ্রামের ক্ষেত্রে
সহায়তা করে।
অঙ্গভঙ্গিঃ-
যে সকল অঙ্গভঙ্গি মানসিক চাপের কারণ হয় তা এড়িয়ে চলুন। মেরুদন্ড সোজা রেখে বসুন বা দাঁড়ান।
একঘন্টা ক্রমাগত কথা বললে তা পাঁচঘন্টা পরিশ্রমের চেয়েও বেশি ক্লান্তি সৃষ্টি করে। এর কারণ হচ্ছে, দৈহিক পরিশ্রমের জন্য যে পরিমাণ মাংসপেশী ব্যবহৃত হয় কথা বলার ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি মাংসপেশী ব্যবহৃত হয়। মানুষ সাধারণত রাজনীতি, ক্রিকেট, সিনেমা অভিনেতা এবং অভিনেত্রী, অর্থ সংগ্রহ ও সঞ্চয়, যৌন জীবন প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে প্রকল্পে মগ্ন হয়ে থাকে। মৌনতা মনকে শান্ত করতে পারে। এর চেয়ে উৎকৃষ্ট বিকল্প হচ্ছে ভগবানের মহিমা বা লীলা সম্পর্কে কথা বলা যা মনকে প্রশান্ত করে এবং হৃদব্যাধির উপশম করে।
মানসিক:
আমাদের মন নির্দিষ্ট কিছু রীতিনীতি, সামাজিক আদর্শ অনুসারে আচরণ করতে অভ্যস্থ। একে সমাজের সংস্কৃতি বলে। এগুলো হচ্ছে মনের বৈশিষ্টাবলী। সমাজের এই আদর্শগুলো সবাই গ্রহণ করলে আমরা নিজেদেরকে নিরাপদ বলে অনুভব করি, তা ভঙ্গ করা হলে আমরা আতঙ্কিত হই, অনিরাপদ বোধ করি। আমাদের টিকে থাকার প্রবৃত্তি প্রতিটি শব্দ, দৃশ্য এবং ইঙ্গিতকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক হিসেবে বিভক্ত করে। বিভিন্ন কারণে আমরা মানসিক চাপের সম্মুখীন হই, যেমন- মানুষের আচরণ, নির্দিষ্ট সময়সীমা অনুসারে কার্য সম্পাদন করার প্রয়াস, অন্যদের দ্বারা অপমানিত হওয়া ইত্যাদি । সার্কাসে যেমন কোন হাল্কা পাতলা ধরণের মানুষ কেবল তার হাত নেড়ে বিশাল হস্তীকে পরিচালনা করে বা বহু কঠিন কার্য সম্পাদন করে তদ্রুপ মানুষ তার চারপাশের নানাবিধ পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রচুর মানসিক চাপের স্বীকার হয়। সেই পরিস্থিতিগুলো হতে পারে- অতিরিক্ত ক্রোধ, অপ্রয়োজনীয় ভয়, অতিরিক্ত ঘৃণা, অর্থহীন দুশ্চিন্তা প্রভৃতি ।
পরিবেশগত:
অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা, দূষণ, ভিড়পূর্ণ ট্রেন বা বাস প্রভৃতিও আমাদেরকে প্রভাবিত করে। আমরা কতটুকু সহ্য করতে পারব তা নির্ভর করে আমাদের “প্রাণশক্তি বা দৈহিক সহ্যক্ষমতার উপর। সেই কারণে একই পরিবেশগত পরিস্থিতির দ্বারা বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন মাত্রার প্রভাবিত হতে দেখা যায় ।
কর্মসংক্রান্ত মানসিক চাপ
জরুরি কাজের প্রতি আসক্তঃ কিছু ব্যক্তি- * সর্বদা নির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য সংগ্রাম করে।
* সর্বদা শেষ মুহুর্তে কোন কিছু করার অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যা তাদের উদ্বেগ ও মানসিক চাপের কারণ হয় (দৃষ্টান্ত) রেল ধরা, কর্মস্থলে দেরীতে যাওয়া। কোন পত্র প্রস্তুত করতে বলে এবং তা তৎক্ষণাৎ সংশোধন করার জন্য ফিরিয়ে দিতে বলে।
পরস্পরের সাথে কলহ :
পরস্পরের সাথে কলহ করলে তা সুনিশ্চিতভাবেই আমাদেরকে কষ্ট দেয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে গভীর আবেশ সৃষ্টি করে। কিন্তু এর কারণ কি?
* আপনার চারপাশের ব্যক্তিরা- কলিষ্ঠ/অনুগত- আপনার প্রত্যাশা অনুসারে আচরণ করে না। * আপনার অনুগতরা যখন আশানুরূপ ফল প্রদান করতে ব্যর্থ
হয়।
* অনেকে আপনার মতের সাথে একমত হয় না এবং আপনার মতের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে ।
* আপনি যার সাথে আলোচনা করেন সে আপনার প্রয়োজন এবং সমস্যাগুলোকে সহ্য করে না।
* অনেকে তাদের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে না। * অনেকে অর্থ, পণ্য সরবরাহ, পণ্যের গুণগত মান প্রভৃতি বিষয়ে আপনার সাথে প্রতারণা করে প্রভৃতি ।
একসাথে অনেকগুলো কাজ করাঃ
মানুষের মনে প্রবল গতিবেগে একের পর এক ভাবনা তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে। অধৈর্য, হতাশা, তাড়াহুড়ো প্রভৃতি ক্ষেত্রে মনের গতিবেগ বেশি থাকে। মনের অতিরিক্ত গতিবেগের কারণে মনে ক্লান্তি সৃষ্টি হয় এবং মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। একটি নিয়ন্ত্রিত মন তার ইচ্ছানুসারে অন্য কোন চিন্তাকে প্রবেশ করতে না দিয়ে চিন্তাকে হৃদয়ে ধরে রাখতে পারে। আধুনিক লোকেরা একত্রে বহু কাজ করতে গিয়ে অবস্থা উদ্বেগের স্বীকার হয়।
অবাস্তব লক্ষ্য :
বর্তমানে কোম্পানীগুলো
মোটা অংকের বেতন দেয় কিন্তু
একজনকে দিয়ে তিনজনের কাজ করিয়ে
নেয়। এর ফলে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।
বর্তমান যুগের কর্মীরা নিজের স্বাস্থ্য, ধন, পরিবার বা মনের শান্তির কথা চিন্তা না করেই অবাস্তব লক্ষ্য স্থির করে আর এভাবে নিজেদেরকে কষ্ট দেয়। ব্যর্থতার ভয়ের কারণে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।
অসুস্থ প্রতিযোগীতা-
একবার এক লোক যখন দেখতে পেল যে আর একটি গাড়ি তাকে অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে তখন সে কেবল নিজের গাড়ি চালানোর সক্ষমতা দেখানোর জন্য অন্য চালকের সাথে ২০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে ছিল। মানুষ প্রতিযোগীতা করে জেতার জন্য। তারা সাফল্যের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছোনোর জন্য নিজেদের ক্ষতি করতেও কিছু মনে করে না। এক ছোট কোম্পানী কেবল একটি বড় অটোমোবাইল কোম্পানীর অর্ডার গ্রহণ করার জন্য ২০% ক্ষতিতে প্রতিযোগীতামূলক পণ্য বিক্রি করতে শুরু করেছিল। কিন্তু খুব শীঘ্রই তা দেওলিয়ায় পরিণত হয়। এরূপ প্রতিযোগীতা মনে চাপ সঞ্চার করে।
অতিরিক্ত কাজের চাপ ঃ
আমাদের কাজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট দৈহিক এবং মানসিক সক্ষমতার মাত্রা রয়েছে। এটি একটি পরিসীমা। আমরা যখন আমাদের সক্ষমতার সীমার বাইরে কাজ করতে বাধ্য হই তখন সেই সীমা ভেঙ্গে যায় এবং আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। আমরা প্রদত্ত কর্মটি সম্পাদনে ব্যর্থতার ভয়ে ভীত হই। আমাদের স্বভাবতই টিকে থাকার প্রবণতা রয়েছে। ব্যর্থতা সেখানে হুমকির সৃষ্টি করে। সেখানে অতিরিক্ত কাজের চাপ মানসিক চাপের কারণ হয় ।
অনিয়মিত খাদ্যাভাস :
আপনি যা আহার করেন আপনি।
তাই। মাংস, মাছ, ডিম প্রভৃতি কোলেষ্টরল বা এবং বিভিন্ন প্রকার রোগের সৃষ্টি করে। মানুষের দেহ আমিধা জন্য উপযুক্ত নয় তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের আহার্য ভারসাম্যপূর্ণ এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়া উচিত। প্রাতঃরাশের খাবারগুলো দিনের সবচেয়ে বেশি। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার হওয়া উচিত।
দুপুরের খাবার মধ্যম মানের হলেও চলে। রাতে হালকা পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা উচিত এবং তা করা উচিত ঘুমানোর এক থেকে দেড় ঘন্টা পূর্বে। আধুনিক যুগে মানুষ চিপস ও বিস্কুট চিবোধ, কোলা ও সফট ড্রিংকস পান করে, মধ্যরাতে উত্তেজক খাবার গ্রহণ করে। কয়েক বার ঘুমালে বা দিনের বেলা ঘুমালে তা হজমে বাধা সৃষ্টি করে এবং মানসিক চাপের কারণ হয়।
স্বাস্থ্যের যে অধঃপতন হয় তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তা অনেকটা স্বেচ্ছায় মূল্যবান মানব দেহটি নষ্ট করার মতো। দেহের প্রতি এরূপ অবিচার মানসিক চাপের উদ্রেক করে এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে গিয়ে বহু অর্থ ব্যয় হয়।